Evolution and Generation of Computer
কম্পিউটারের বিবর্তন ও প্রজন্ম
কম্পিউটার হার্ডওয়্যারের ক্রমবিবর্তন বলতে মূলত কম্পিউটারের প্রজন্ম বা জেনারেশনকেই বোঝায়। কম্পিউটার জেনারেশন বা প্রজন্ম বলতে এর প্রযুক্তিগত বিবতনকেই বোঝানো হয়ে থাকে।
প্রথম প্রজন্মের কম্পিউটার
প্রথম প্রজন্মের কম্পিউটারের ব্যাপ্তিকাল ধরা হয় ১৯৪২ থেকে ১৯৫৯ সাল পর্যন্ত। প্রথম প্রজন্মের কম্পিউটারের সার্কিটে বায়ুশূন্য টিউব বা ভ্যাকুয়াম টিউব ব্যবহার করা হতো। কম্পিউটারগুলো আকৃতিতে বড় থাকার কারণে সহজে বহনযোগ্য ছিল না। কম্পিউটারে বিদ্যুৎ খরচ বেশি হতো এবং প্রচুর তাপ উৎপন্ন হতো। পাঞ্চ কার্ডের মাধ্যমে ইনপুট দেওয়ার ব্যবস্থা ছিল। বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে এসব কম্পিউটারের ব্যবহার ছিল খুবই সীমিত। এ প্রজন্মের কম্পিউটারে প্রোগ্রামের জন্য মেশিন ও অ্যাসেম্বলি ভাষা ব্যবহার করা হতো।
উদাহরণঃ MARK-1, ENIAC, UNIVAC, EDSAC, IBM-650, IBM-704 ইত্যাদি।
দ্বিতীয় প্রজন্মের কম্পিউটার
দ্বিতীয় প্রজন্মের কম্পিউটারের ব্যাপ্তিকাল ধরা হয় ১৯৬০ থেকে ১৯৬৪ সাল পর্যন্ত।
দ্বিতীয় প্রজন্মের কম্পিউটারগুলোতে ভ্যাকুয়াম টিউবের পরিবর্তে ট্রানজিস্টর ব্যবহার করা হয়েছিল।
১৯৪৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের বেল ল্যাবরটরিতে জন বারডিন, উইলিয়াম শকলে এবং ওয়াল্টার ব্রাটেইন ট্রানজিস্টর উদ্ভাবন করেন। দুটি অর্থপরিবাহী ডায়োডকে পাশাপাশি যুক্ত করে একটি অর্ধপরিবাহী ট্রায়োড তৈরি করা হয়। একে ট্রানজিস্টর বলা হয়। ট্রানজিস্টর তৈরিতে একটি অর্ধপরিবাহী সিলিকন বা জার্মেনিয়াম ব্যবহৃত হয়। ট্রানজিস্টর মূলত এমপ্লিফায়ার হিসেবে কাজ করে। ট্রানজিস্টর আবিষ্কারের মধ্য দিয়ে ইলেকট্রনিক্সে বিপ্লব শুরু হয়।
টিউবের তুলনায় ট্রানজিস্টর আকারে ছোট, বিদ্যুৎ খরচ কম, দামে সস্তা এবং দ্রুত গতিসম্পন্ন হওয়ায় দ্বিতীয় প্রজন্মের কম্পিউটারগুলো আকৃতিতে ছোট, দ্রুতগতি ও অধিক নির্ভরযোগ্য ছিল। দ্বিতীয় প্রজন্মের কম্পিউটারে সর্বপ্রথম উচ্চস্তরের ভাষা যেমন COBOL, FORTRAN ইত্যাদির ব্যবহার শুরু হয়। আবার ম্যাগনেটিক কোর মেমোরি এবং উচ্চগতিসম্পন্ন ইনপুট-আউটপুট ব্যবস্থাও এ প্রজন্মের কম্পিউটারে ব্যবহৃত হয়।
উদাহরণঃ IBM 1401, CDC 1604, RCA 401, RCA 501, BCR 300, GE 200, Honey Well 200, IBM 1620 ইত্যাদি।
তৃতীয় প্রজন্মের কম্পিউটার
তৃতীয় প্রজন্মের কম্পিউটারের ব্যাপ্তিকাল ধরা হয় ১৯৬৫ থেকে ১৯৭০ সাল পর্যন্ত। ১৯৫৮ সালে রবার্ট নইসি (Robert Noyce) এবং জ্যাক কিলবি (Jack Kilby) সমন্বিত বর্তনী (Integrated Circuit) সংক্ষেপে IC আবিষ্কার করে ইলেকট্রনিক জগতে যুগান্তকারী পরিবর্তনের সূচনা করেন। মাইক্রোইলেকট্রনিক্সের অগ্রযাত্রা মূলত তখন থেকেই শুরু হয়। একটি মাত্র IC তে অনেকগুলো ট্রানজিস্টর, রেজিস্টার, ক্যাপাসিটর, এবং অন্যান্য উপকরণ মিশিয়ে একটি ক্ষুদ্র সিলিকন পাতের উপর স্থাপন করা হয়ে থাকে। ফলে কম্পিউটারের আকার আরো ছোটো হয়ে আসে, দাম কমে যায়, বিদ্যুৎ খরচ কমে যায়, কাজের গতি ও নির্ভরশীলতা বহুগুণে বেড়ে যায়। তৃতীয় প্রজন্মের কম্পিউটারে SSI (Small Scale Integration), MSI (Medium Scale Integration) ধরণের IC ব্যবহৃত হতো। IC চিপ দিয়ে তৈরি প্রথম ডিজিটাল কম্পিউটার হলো IBM System 360।
তৃতীয় প্রজন্ম থেকেই অর্ধপরিবাহী স্মৃতির ব্যবহার, কম্পিউটারের সাথে ভিডিও ডিসপ্লে ইউনিট, উচ্চগতির লাইন প্রিন্টারসহ অন্যান্য পেরিফেরাস ডিভাইসের ব্যবহার শুরু হয়।
উদাহরণঃ IBM 360, PDP 8, PDP II
চতুর্থ প্রজন্মের কম্পিউটার
চতুর্থ প্রজন্মের কম্পিউটারের ব্যাপ্তিকাল ধরা হয় ১৯৭১ থেকে বর্তমান পর্যন্ত। চতুর্থ প্রজন্মের কম্পিউটারগুলো মাইক্রোপ্রসেসর ব্যবহার করে তৈরি করা হতো। ১৯৭০ সালের প্রথম দিকে IC এর দ্রুত উন্নয়নের ফলে LSI (Large Scale Integration) এবং VLSI (Very Large Scale Integration) চিপের আবির্ভাব ঘটে। ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট প্রযুক্তি উত্তরোত্তর উন্নতির সঙ্গে কম্পিউটারের কেন্দ্রীয় প্রক্রিয়াকরণ অংশ বা প্রসেসরের সকল উপাদানকে একটি মাত্র সিলিকন চিপের মধ্যে একীভূত করা সম্ভব হয়। এই চিপকে মাইক্রোপ্রসেসর বলা হয়। মূলত মাইক্রোপ্রসেসর হলো সিলিকনের তৈরি এক ধরণের VLSI চিপ। যুক্তরাষ্ট্রের ইনটেল কর্পোরেশন ড. টেড হফ (Dr. Ted Hoff) এর তত্ত্বাবধানে ১৯৭১ সালে প্রথম মাইক্টোপ্রসেসর তৈরি করে যার নাম ইনটেল-৪০০৪। ইনটেল-৪০০৪ ই ছিল বাণিজ্যিকভাবে প্রাপ্ত বিশ্বের প্রথম মাইক্রোপ্রসেসর। মাইক্রোপ্রসেসরের ব্যবহারের ফলে কম্পিউটারের আকার আরো ছোট হয়ে যায়, দাম কমে যায় এবং বিদ্যুৎ খরচ কমে যায়। কম্পিউটারে উন্নত মেমরির তথা ম্যাগনেটিক বাবল মেমরির ব্যবহার শুরু হয়। Windows, DOS অপারেটিং সিস্টেম দুটির ব্যবহার এ প্রজন্ম থেকেই শুরু হয়। ডেটা স্টেরেজ এবং সহযোগী যন্ত্রের ব্যাপক সম্প্রসারণ ঘটে।
উদাহরণঃ IBM 3033, IBM 4341, TRS 40, Pentium Series ইত্যাদি।
পঞ্চম প্রজন্মের কম্পিউটার
সাধারণত ২০০১ সাল থেকে শুরু করে বর্তমান সময়ের কম্পিউটারগুলোকে পঞ্চম প্রজন্মের কম্পিউটার হিসেবে বিবেচনা করা হয়। মূলত পঞ্চম প্রজন্ম বলতে প্রকৃত অর্থে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকেই বুঝায়। এ প্রজন্মের কম্পিউটারগুলো মানুষের ভাষায় কথা বলা ও মানুষের কথা বুঝতে পারার ক্ষমতাও থাকবে। অর্থাৎ এগুলো হবে বুদ্ধিমান কম্পিউটার। পঞ্চম প্রজন্ম VLSI প্রযুক্তিকে অতিক্রম করে UVLSI (Ultra Very Large Scale Integration) প্রযুক্তিতে অবস্থান করবে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও রোবোটিকস প্রযুক্তির চরম বিকাশ ঘটবে। কণ্ঠস্বর সনাক্তকরণ এবং বিশ্বের সকল ভাষায় কম্পিউটিং এর সম্প্রসারণ ঘটবে।
Comments