জীবনানন্দ দাশ
তিরিশের দশকের তথাকথিত জনবিচ্ছিন্ন, রবীন্দ্র বলয় ছিন্নকারী ও উত্তরকালের কবিদের উপর সর্বাপেক্ষা প্রভাববিস্তারকারী কবি জীবনানন্দ দাশ। তাঁর কবিতায় গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যময় প্রকৃতি কাব্যময় হয়ে উঠেছে। আধুনিক নাগরিক জীবনের হতাশা, নিঃসঙ্গতা, বিষাদ ও সংশয়ের চিত্র তাঁর কবিতায় দীপ্যমান। বিশ শতকের ষাটের দশকের বাঙালির জাতিসত্ত্বা আন্দোলনে ও ১৯৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধে তাঁর নিসর্গবিষয়ক কবিতা এদেশের সংগ্রামী জনতাকে অনুপ্রাণিত করেছে।
☞ জীবনানন্দ দাশ ১৭ ফেব্রুয়ারি, ১৮৯৯ সালে বরিশালের এক ব্রাহ্ম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। আদি নিবাসঃ গাঁওপাড়া, বিক্রমপুর। ডাক নাম মিলু। ☞ তাঁর মা কুসুমকুমারী দাশ (একজন মহিলা কবি)।
☞ ১৯১৯ সালে ব্রাহ্মবাদী পত্রিকার বৈশাখ সংখ্যায় ☞ তাঁর প্রথম কবিতা 'বর্ষা আবাহন' প্রকাশিত হয়।
☞ তিনি ১৯৪৭ সালে 'দৈনিক সৃবরাজ' পত্রিকার সাহিত্য বিভাগের সম্পাদক ছিলেন।
☞ তিনি ১৯৭৬ সালে একুশে পদক এবং বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক ডি.লিট ডিগ্রি লাভ করেন।
☞ ১৯২৫ সালে দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ মৃত্যুবরণ করলে তিনি 'দেশবন্ধুর প্রয়াণে' নামে একটি কবিতা লিখেন। এটি 'বঙ্গবাণী' পতৃরিকায় প্রকাশিত হয়।
☞ তিনি ১৯৫৪ সালের ১৪ অক্টোবর বালিগঞ্জে ট্রামের নিচে পড়ে আহত হন, পরে ২২ অক্টোবর শম্ভুগঞ্জ পণ্ডিত হাসপাতালে মারা যান।
প্রশ্নঃ জীবনানন্দ দাশকে কোন ধরণের কবি বলা হয়?
উত্তরঃ জীবনানন্দ দাশকে রূপসী বাংলার কবি, ধূসরতার কবি, তিমির হননের কবি, নির্জনতার কবি, চিত্ররূপময় কবি বলা হয়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর 'ধূসর পাণ্ডুলিপি'র কবিতা পড়ে জীবনানন্দ দশকে 'চিত্ররূপময় কবি' এবং বুদ্ধদেব বসু জীবনানন্দকে 'নির্জনতম কবি' বলে আখ্যায়িত করেন।
প্রশ্নঃ জীবনানন্দ দাশের উপর কে গবেষণা করেছেন?
উত্তরঃ ক্লিনটন বি সিলি।
* জীবননানন্দ দশের কাব্যগ্রন্থসমূহঃ
☞ ঝরাপালক
☞ ধূসর পাণ্ডুলিপি
☞ বনলতা সেন
☞ রূপসী বাংলা
☞ মহাপৃথিবী
☞ সাতটি তারার তিমির
☞ বেলা অবেলা কালবেলা
ঝরাপালক
১৯২৮ সালে প্রকাশিত হয়। এটি তার প্রথম কাব্য। এ কাব্য রচনায় তিনি রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, সত্যেন্দ্রনাথ দত্তকে অনুকরণ করেছেন। এ কাব্যের মাধ্যমে নামের শেষে দাশগুপ্ত এর পরিবর্তে দাশ ব্যবহার করেন।
ধূসর পাণ্ডুলিপি
১৯৩৬ সালে প্রকাশিত হয়। এ কাব্যের বিখ্যাত কবিতা 'মৃত্যুর আগে'। এটি বুদ্ধদেব বসুর 'কবিতা' সাহিত্য পত্রিকার প্রথম সংখ্যায় ছাপা হয়। এ কবিতাটি পাঠ করে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বুদ্ধদেব বসুকে লেখা এক চিঠিতে 'চিত্ররূপময়' বলে মন্তব্য করেন। কবিতাটির সাথে W.B. Yeats এর 'The Falling of the Leaves' কবিতার মিল আছে।
বনলতা সেন
১৯৪২ সালে প্রকাশিত হয়। ৩০ টি কবিতার সমন্বয়ে রচিত এ কাব্য। এ কাব্যের 'বনলতা সেন' কবিতাটি তিনি এডগার এলেন পোর 'টু হেলেন' কবিতার অনুকরণে রচনা করেন।
রূপসী বাংলা
১৯৫৭ সালে প্রকাশিত হয়। কবির মৃত্যুর পরবএ কাব্যের পূর্ণাঙ্গ পাণ্ডুলিপি আবিষ্কৃত হয়। তিনি এর প্রচ্ছদে নাম রেকেছিলেন 'বাংলার ত্রস্ত নীলিমা'। কিন্তু পৃরকাশের সময় এর নামকরণ করা হয়' রূপসী বাংলা'। এ কাব্যের বিষয় বাংলার গ্রাম, প্রকৃতি, নদী-নালা, পশু-পাখি, উৎসব ও অনুষ্ঠান। এটি তাঁর স্বদেশপ্রীতি ও নিসর্গময়তার পরিচায়ক কাব্য। ' আবার আসিব ফিরে ধানসিড়ির তীরে এ বাংলায়' এ কাব্যের বিখ্যাত পঙক্তি।
জীবনানন্দ দাশে কাব্যে ব্যবহৃত 'শঙ্খমালা' হলো রূপকথার চরিত্র।
* জীবনানন্দ দশের উপন্যাসসমূহঃ
☞ মাল্যবান (১৯৭৩)
☞ সতীর্থ (১৯৭৪)
☞ কল্যাণী (১৯৯৯)
সবকটি উপন্যাস কবির মৃত্যর পর প্রকাশিত হয়।
* জীবনানন্দ দাশের প্রবন্ধসমূহঃ
☞ কবিতার কথা (১৯৫৬)
এ প্রবন্ধের বিখ্যাত উক্তি ' সকলেই কবি নন, কেউ কেউ কবি'।
বিখ্যাত পঙক্তি
☞ পাখির নীড়ের মতো চোখ তুলে নাটোরের বনলতা সেন। (বনলতা সেন)
☞ বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি,
তাই আমি পৃথিবীর রূপ খু্ঁজিতে যাই না আর। (বাংলার মুখ)
☞ সুরঞ্জনা, ওইখানে যেয়ো নাকো তুমি। (,আকাশনীলা)
☞ আবার আসিব ফিরে ধানসিঁড়ির তীরে। (আবার আসিব ফিরে)
☞ চুল তার কবেকার অন্ধকার বিদিশার নিশা (বনলতা সেন)
☞ কে হায় হৃদয় খু্ড়ে বেদনা জাগাতে ভালোবাসে। (হায় চিল)
☞ সমস্ত দিনের শেষে শিশিরের শব্দের মতো সন্ধ্যা আসে। (বনলতা সেন)
☞ সোনার স্বপ্নের সাধ পৃথিবীতে কবে আর ঝরে। (সেই দিন এই মাঠ)
Comments